ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘নিরস্ত্র বাঙালির গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা’

'নিরস্ত্র বাঙালির গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা'

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘নিরস্ত্র বাঙালির গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা। হাজার বছরের বঞ্চনায় যে বাংলাদেশ নিমজ্জিত ছিল, সেখান থেকে মুক্তি এনে দিয়েছেন আমাদের একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে অগ্রাধিকার দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।

মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

মো. মশিউর রহমান বলেন, বাবার শূন্যতায় তার সহধর্মিণীকে সন্তানেরা বাবা-মা একসঙ্গে ভাবতো। তিনি আমাদের পিতা হয়েছেন শিশুপুত্রদের আদর বঞ্চিত করে। তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। অতঃপর ৭ই মার্চের সেই আহ্বান- ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।’ দুর্গ গড়ে তোলার সেই আহ্বানকে মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করেছেন যে অতন্ত্র প্রহরীর মতো নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছেন। গেরিলা যোদ্ধা হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাসের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পোশাক পরিহিত সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে এদেশের জনগণ।

বাঙালির বীরত্বগাথা তুলে ধরে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, বীর বাঙালি লুঙ্গি আর স্যান্ডু গেঞ্জি পরে গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ৯ মাসের সশস্ত্র বিপ্লবে সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে পাকিস্তানিদের। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেই বাঙালি সশস্ত্র যোদ্ধা হয়ে উঠল, দেশ মাতৃকাকে সুরক্ষার বিপ্লব এবং জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন তা নয়, তার আগে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ গঠন করেছেন। কারাগারে বসে স্ত্রীর অনুরোধে বই লিখেছেন। একটু সময়ও তিনি অপচয়, অপব্যয় করেননি। দেশমাতৃকা সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু চাইলেই আরাম, আয়েশের পথ বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করলেন না। তিনি দেখলেন প্রকৃত অর্থে সোনার বাংলা করতে হলে বিরাজমান প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়। এক কথায় তিনি বললেন প্রচলিত এই সমাজ আমি ভেঙে ফেলব, নতুন সমাজ গড়ব। অত্যন্ত সাহসিকতার কথা। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এমন সাহসী বক্তব্য আর কেউ রাখতে পারে না। তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বললেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, মূলত দেশগড়ার পরে সমাজ গড়ায় তিনি যখন হাত দিলেন, নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি যখন হাত দিলেন, নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ায় তিনি যখন হাত দিলেন সেই অর্থনীতি ব্যবস্থা আজকে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নানাভাবে আঙ্গুলি দেখায় তাদের অর্থনীতির ব্যবস্থার বিপরীতে নতুন অর্থনীতি হতো। তিনি সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয়ের কথা বলেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মিশ্রণের কথা বলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। আজও পৃথিবীর ইতিহাসে এই আধুনিক চারটি উপকরণ নিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র  সবচেয়ে বেশি এগোতে পারে, তিনি সেটি প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এই যে অনন্য অবস্থান, সেই জায়গা থেকে আমাদের পথ চলায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতদের বুলেটে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় জাতির পিতাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশ তার সংবিধানের মূল জায়গা থেকে ধীরে ধীরে ধসে পড়ল।

শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, যে শিশুরা এখানে এসেছ- সেদিন আমাদের বাবা, মা, পিতামহ যারা দেশকে সুরক্ষার জন্য হাতে অস্ত্র নিয়েছিল তোমাকে সেই কাজটি করতে হবে না। তোমাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা যিনি আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছেন। আজকে তোমার হাতে আর অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। এই ডিজিটাল বাংলাদেশে তোমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন তিনি দিয়েছেন। আগামী দিনে তুমি স্মার্ট নাগরিক হবে। প্রতিনিয়ত তুমি পড়াশোনা করবে। তোমাকে নতুন ভাবনা করতে হবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কেমন করে বিশ্বের মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, সেটিই হবে তোমার মূল লক্ষ্য। এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে যেন তুমি বিশ্ব নাগরিক হতে পারো। তোমাদের হাত ধরে আমরা আগামী দিনে বিশ্বের নেতৃত্ব দেব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম এ বারী। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‘নিরস্ত্র বাঙালির গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা’

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘নিরস্ত্র বাঙালির গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ওঠা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা। হাজার বছরের বঞ্চনায় যে বাংলাদেশ নিমজ্জিত ছিল, সেখান থেকে মুক্তি এনে দিয়েছেন আমাদের একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে অগ্রাধিকার দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।

মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।

মো. মশিউর রহমান বলেন, বাবার শূন্যতায় তার সহধর্মিণীকে সন্তানেরা বাবা-মা একসঙ্গে ভাবতো। তিনি আমাদের পিতা হয়েছেন শিশুপুত্রদের আদর বঞ্চিত করে। তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। অতঃপর ৭ই মার্চের সেই আহ্বান- ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।’ দুর্গ গড়ে তোলার সেই আহ্বানকে মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করেছেন যে অতন্ত্র প্রহরীর মতো নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছেন। গেরিলা যোদ্ধা হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাসের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পোশাক পরিহিত সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে এদেশের জনগণ।

বাঙালির বীরত্বগাথা তুলে ধরে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, বীর বাঙালি লুঙ্গি আর স্যান্ডু গেঞ্জি পরে গেরিলা যোদ্ধা হয়ে ৯ মাসের সশস্ত্র বিপ্লবে সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে পাকিস্তানিদের। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেই বাঙালি সশস্ত্র যোদ্ধা হয়ে উঠল, দেশ মাতৃকাকে সুরক্ষার বিপ্লব এবং জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন তা নয়, তার আগে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ গঠন করেছেন। কারাগারে বসে স্ত্রীর অনুরোধে বই লিখেছেন। একটু সময়ও তিনি অপচয়, অপব্যয় করেননি। দেশমাতৃকা সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু চাইলেই আরাম, আয়েশের পথ বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করলেন না। তিনি দেখলেন প্রকৃত অর্থে সোনার বাংলা করতে হলে বিরাজমান প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়। এক কথায় তিনি বললেন প্রচলিত এই সমাজ আমি ভেঙে ফেলব, নতুন সমাজ গড়ব। অত্যন্ত সাহসিকতার কথা। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এমন সাহসী বক্তব্য আর কেউ রাখতে পারে না। তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। শোষিতের গণতন্ত্রের কথা বললেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, মূলত দেশগড়ার পরে সমাজ গড়ায় তিনি যখন হাত দিলেন, নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি যখন হাত দিলেন, নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ায় তিনি যখন হাত দিলেন সেই অর্থনীতি ব্যবস্থা আজকে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নানাভাবে আঙ্গুলি দেখায় তাদের অর্থনীতির ব্যবস্থার বিপরীতে নতুন অর্থনীতি হতো। তিনি সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয়ের কথা বলেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মিশ্রণের কথা বলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। আজও পৃথিবীর ইতিহাসে এই আধুনিক চারটি উপকরণ নিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র  সবচেয়ে বেশি এগোতে পারে, তিনি সেটি প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এই যে অনন্য অবস্থান, সেই জায়গা থেকে আমাদের পথ চলায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতদের বুলেটে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় জাতির পিতাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশ তার সংবিধানের মূল জায়গা থেকে ধীরে ধীরে ধসে পড়ল।

শিশু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, যে শিশুরা এখানে এসেছ- সেদিন আমাদের বাবা, মা, পিতামহ যারা দেশকে সুরক্ষার জন্য হাতে অস্ত্র নিয়েছিল তোমাকে সেই কাজটি করতে হবে না। তোমাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা যিনি আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছেন। আজকে তোমার হাতে আর অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। এই ডিজিটাল বাংলাদেশে তোমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন তিনি দিয়েছেন। আগামী দিনে তুমি স্মার্ট নাগরিক হবে। প্রতিনিয়ত তুমি পড়াশোনা করবে। তোমাকে নতুন ভাবনা করতে হবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কেমন করে বিশ্বের মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, সেটিই হবে তোমার মূল লক্ষ্য। এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে যেন তুমি বিশ্ব নাগরিক হতে পারো। তোমাদের হাত ধরে আমরা আগামী দিনে বিশ্বের নেতৃত্ব দেব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এম এ বারী। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।