ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে প্রবেশ, ইসলাম যা বলে

মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ ও মুক্তির জন্য ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবন ও জগতের খুঁটিনাটি থেকে বৃহৎ- সব বিষয়ের যাবতীয় নিয়মাবলি ও দিকনির্দেশনা এবং সুষ্ঠু সমাধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দিয়েছে ইসলাম। তাই জীবনাচারের প্রতিটি বিষয় ইসলাম গুরুত্বের সঙ্গে ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। যেন জীবনযাপনে ও ধর্ম পালনে মানুষজন অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়।
অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি সব সভ্য সমাজে শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও এর পরোক্ষ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত কিলদাহ ইবনে হাম্বল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, ‘একবার আমি রাসুলের (সা.) কাছে গেলাম। এরপর আমি সালাম না দিয়ে সরাসরি তাঁর কাছে গেলাম।’ অতঃপর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি ফিরে যাও এবং এরপর সালাম দিয়ে বলো, আমি প্রবেশ করতে পারি?’ (আবু দাউদ)
উপরোক্ত হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাকে রাসুল (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি সাহাবি কিলদাহ ইবনে হাম্বলকে আবার বাইরে গিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার আদেশ দিলেন এবং অনুমতি নেওয়ার ধরন ও পদ্ধতি কী হবে, সেটাও শিক্ষা দিয়ে দেন।
রাসুলের (সা.) শিক্ষা পেয়ে সাহাবিরা পুরোপুরি সার্থকভাবে এ উত্তম শিষ্টাচারের অনুশীলন ও চর্চা করেছেন। অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি ছাড়া এবং তাদের সালাম না জানিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়। যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নুর-২৭)
নারী-পুরুষ, পিতা-মাতা, ছোট-বড়, মাহরাম-গায়রে মাহরাম যে কারও ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব। অবশ্য আপন স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব নয়। তারপরও স্ত্রীর কাছে প্রবেশের আগে পদধ্বনি দ্বারা অথবা গলা ঝেড়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) স্ত্রী বলেন, ‘আবদুল্লাহ যখন ঘরে আসতেন, তখন দরজার কড়া নেড়ে আমাকে সতর্ক করে দিতেন। যেন তিনি আমাকে অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। (ইবনে কাছির)
হজরত উমর (রা.)সহ আরও অনেক সাহাবি অনুমতি চাওয়ার সময় নিজের নামও বলতেন। একবার হজরত উমর (রা.) রাসুলের (সা.) ঘরের দরজায় এসে বললেন, ‘উমর কি ঘরে প্রবেশ করতে পারে?’ অনুমতি প্রার্থনাকালে যদি নাম উল্লেখ করা না হয় এবং ঘরের বাসিন্দারা অনুমতি প্রার্থীর নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে, তবে স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করতে হবে। যাতে ঘরের বাসিন্দারা নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া কিংবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতি চাওয়ার অনেক তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. মানুষ নিজ ঘরে স্বাধীনভাবে কাজ করে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশের দ্বারা মানুষের স্বাধীনতায় বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। উপরন্তু কষ্টের কারণ হয়; ২. বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ অন্যের কাছে যায়। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে ঘরের লোকেরা সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রতি সদয় ও বিনম্র হয়। ফলে সাক্ষাৎপ্রার্থীর লক্ষ্য পূরণ অনেকটা সহজ হয়; ৩. বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে হয়তো এমন কিছুর প্রতি দৃষ্টিপাত হতে পারে, যা দ্বারা অন্তরে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফলে নির্লজ্জতা ও অশ্নীলতার পথ খুলে যায়; ৪. সবার অগোচরে মানুষ নিজের ঘরে অনেক কিছু করে, যা কারও কাছে প্রকাশ পাওয়া সে পছন্দ করে না। বিনা অনুমতিতে কারও ঘরে প্রবেশ করলে তার গোপনীয়তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা তার কষ্টের কারণ হতে পারে। ফলে বিনা অনুমতিতে প্রবেশকারী মুসলমানকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে।
সব সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ইসলাম প্রবেশাধিকারের জন্য অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব ও শর্ত করে দিয়েছে। যাতে মানুষের স্বাধীনতা-স্বকীয়তা, গোপনীয়তা ও স্বার্থ রক্ষা হয় এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে প্রবেশ, ইসলাম যা বলে

আপডেট সময় : ১০:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ ও মুক্তির জন্য ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবন ও জগতের খুঁটিনাটি থেকে বৃহৎ- সব বিষয়ের যাবতীয় নিয়মাবলি ও দিকনির্দেশনা এবং সুষ্ঠু সমাধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দিয়েছে ইসলাম। তাই জীবনাচারের প্রতিটি বিষয় ইসলাম গুরুত্বের সঙ্গে ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। যেন জীবনযাপনে ও ধর্ম পালনে মানুষজন অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়।
অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি সব সভ্য সমাজে শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও এর পরোক্ষ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত কিলদাহ ইবনে হাম্বল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, ‘একবার আমি রাসুলের (সা.) কাছে গেলাম। এরপর আমি সালাম না দিয়ে সরাসরি তাঁর কাছে গেলাম।’ অতঃপর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি ফিরে যাও এবং এরপর সালাম দিয়ে বলো, আমি প্রবেশ করতে পারি?’ (আবু দাউদ)
উপরোক্ত হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাকে রাসুল (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি সাহাবি কিলদাহ ইবনে হাম্বলকে আবার বাইরে গিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার আদেশ দিলেন এবং অনুমতি নেওয়ার ধরন ও পদ্ধতি কী হবে, সেটাও শিক্ষা দিয়ে দেন।
রাসুলের (সা.) শিক্ষা পেয়ে সাহাবিরা পুরোপুরি সার্থকভাবে এ উত্তম শিষ্টাচারের অনুশীলন ও চর্চা করেছেন। অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি ছাড়া এবং তাদের সালাম না জানিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়। যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নুর-২৭)
নারী-পুরুষ, পিতা-মাতা, ছোট-বড়, মাহরাম-গায়রে মাহরাম যে কারও ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব। অবশ্য আপন স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব নয়। তারপরও স্ত্রীর কাছে প্রবেশের আগে পদধ্বনি দ্বারা অথবা গলা ঝেড়ে প্রবেশ করা মুস্তাহাব।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) স্ত্রী বলেন, ‘আবদুল্লাহ যখন ঘরে আসতেন, তখন দরজার কড়া নেড়ে আমাকে সতর্ক করে দিতেন। যেন তিনি আমাকে অপছন্দ অবস্থায় না দেখেন। (ইবনে কাছির)
হজরত উমর (রা.)সহ আরও অনেক সাহাবি অনুমতি চাওয়ার সময় নিজের নামও বলতেন। একবার হজরত উমর (রা.) রাসুলের (সা.) ঘরের দরজায় এসে বললেন, ‘উমর কি ঘরে প্রবেশ করতে পারে?’ অনুমতি প্রার্থনাকালে যদি নাম উল্লেখ করা না হয় এবং ঘরের বাসিন্দারা অনুমতি প্রার্থীর নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে, তবে স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করতে হবে। যাতে ঘরের বাসিন্দারা নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া কিংবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতি চাওয়ার অনেক তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. মানুষ নিজ ঘরে স্বাধীনভাবে কাজ করে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশের দ্বারা মানুষের স্বাধীনতায় বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। উপরন্তু কষ্টের কারণ হয়; ২. বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ অন্যের কাছে যায়। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে ঘরের লোকেরা সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রতি সদয় ও বিনম্র হয়। ফলে সাক্ষাৎপ্রার্থীর লক্ষ্য পূরণ অনেকটা সহজ হয়; ৩. বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে হয়তো এমন কিছুর প্রতি দৃষ্টিপাত হতে পারে, যা দ্বারা অন্তরে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফলে নির্লজ্জতা ও অশ্নীলতার পথ খুলে যায়; ৪. সবার অগোচরে মানুষ নিজের ঘরে অনেক কিছু করে, যা কারও কাছে প্রকাশ পাওয়া সে পছন্দ করে না। বিনা অনুমতিতে কারও ঘরে প্রবেশ করলে তার গোপনীয়তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা তার কষ্টের কারণ হতে পারে। ফলে বিনা অনুমতিতে প্রবেশকারী মুসলমানকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে।
সব সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ইসলাম প্রবেশাধিকারের জন্য অনুমতি চাওয়া ওয়াজিব ও শর্ত করে দিয়েছে। যাতে মানুষের স্বাধীনতা-স্বকীয়তা, গোপনীয়তা ও স্বার্থ রক্ষা হয় এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে।